বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত ও ক্ষতিকর রাসায়নিক সার, বালাইনাশক, প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম রঞ্জক, ইত্যাদির যথেচ্ছা ব্যবহারে গড়ে উঠা বর্তমান খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার ফলস্বরূপ আজ বিপন্ন মানবস্বাস্থ্য, বিপন্ন প্রাণ-প্রকৃতি এবং বিপন্ন ধরণী। মাটির স্বাস্থ্য যেভাবে বিনষ্ট হচ্ছে; প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও কৃষিপ্রতিবেশ যেভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে তা যদি রোধ করা না যায় তবে দীর্ঘমেয়াদে একটি প্রজাতি হিসেবে মানুষের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। বিষাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের ফলে সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকাই আজ দুষ্কর হয়ে উঠেছে। হু হু করে বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনিরোগের মত মারণব্যাধিসহ নানান রোগব্যাধি; বাড়ছে স্বাস্থ্যব্যয়, স্বাস্থ্যজনিত দুর্ভোগ এবং মৃত্যুঝুঁকি। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে বেড়ে উঠছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম।
বাংলাদেশ দাদানার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বলে দাবী করা হলেও সুস্বাস্থ্যের জন্য যে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য অত্যাবশ্যক তা আজ বাংলাদেশে দুর্লভ। পক্ষান্তরে, খাদ্যদ্রব্যের ক্রমবর্ধমান উচ্চমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের আয় না বাড়ায় দরিদ্র এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষেরও খাদ্য ক্রয়ক্ষমতা দিনদিন কমছে। অত্যাবশ্যক খাদ্যদ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি এদেশে একটি প্রকট এবং অনেকটা সমাধানহীন সমস্যা হিসেবে যুগের পর যুগ বিরাজমান। বাজারে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহে খুব বেশি ঘাটতি না থাকলেও ক্রয়ক্ষমতার অভাব, নিরাপদ খাদ্যের দুষ্প্রাপ্যতা এবং পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতা – ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অদ্যাবধি চরম ঝুকি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ’গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স -২০১৯’অনুসারে ১১৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম (স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৫৩.২) যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি মানদন্ডে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩ দেশের মধ্যে ১০৭তম (স্কোর ১০০এর মধ্যে মাত্র ৩০.৬) যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
অন্যদিকে, খাদ্য উৎপাদক কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, বিরূপ প্রকৃতির সাথে নিরন্তর লড়াই করে যে খাদ্য উৎপাদন করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা তার লাভজনক মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। একথা সবারই জানা যে, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থেকে উৎপাদক কৃষকেরা খুব একটা লাভবান না হলেও লাভবান হয় ব্যবসায়িরা, বিশেষ করে মজুদদারেরা যাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে খোদ রাষ্ট্রও চরম অসফলতা ও অপারগতা দেখাচ্ছে। বলা হচ্ছে এই মুক্ত বাজারের যুগে বাজারের ওপর হস্তক্ষেপ চলেনা। বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে যাওয়া পর্যন্ত পুরো সরবরাহ ব্যবস্থাই ক্রমশ কর্পোরেট-ব্যাসায়িদের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আরও বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
এমতাবস্থায়, আমরা যদি নিরাপদ খাদ্য পেতে চাই এবং এটা চাই যে কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম পাক তবে সবাই মিলে উদ্যোগী হওয়ার কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয়না। কারণ, আমরা চাই কম দামে নিরাপদ এবং সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্যপণ্য। কিন্তু বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা শ্রমসাধ্য এবং কঠিন এবং তা কৃষকের দায় নয়। তাছাড়া, এদেশে নিরাপদ খাদ্যের তেমন কোন নির্ভরযোগ্য সরবরাহ ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। খাদ্যপণ্যকে নিরাপদ করতে হলে উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে আমাদের খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ, যেমনঃ উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, পরিবহন ইত্যাদি সবকিছুই নিরাপদ হওয়া জরুরী। এটা সম্ভব করতে হলে আমাদেরকে কৃষকদের দ্বারস্থ হতে হবে, তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে এবং কৃষকের মাঠ থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত গড়ে তুলতে হবে এক নিরাপদ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা। এখন প্রশ্ন হলো, এই কঠিন কাজটার বাস্তব রূপায়ন কি করে সম্ভব? জাপানে গড়ে উঠা ”সিকাতসু ক্লাব কনজ্যুমারস কোঅপারেটিভ” এক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটি দিক নির্দেশক দৃষ্টান্ত হতে পারে।
সিকাতসু ক্লাব কনজ্যুমারস কোঅপারেটিভ
১৯৬৫ সালের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জাপানে তখনও চরম অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকট চলছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম তখন আকাশচুম্বী যা আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার সাথে তুলনীয় । মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্বও তখন আমাদের দেশের মতই চরম নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ছিল। এমতাবস্থায়, টোকিওর এক গৃহিনী ২০০ জন মহিলাকে সংগঠিত করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সাশ্রয়িমূল্যে খাঁটি দুধ নিয়মিতভাবে কেনার উদ্যোগ নিলেন। এরপর এই সাপ্লাই চেইনে একে একে যুক্ত হয় খাদ্যসহ প্রায় তিন হাজার প্রকারের ভোগ্যপণ্য। তিন বছরের মাথায় ১৯৬৮ সালে উক্ত গৃহিনীর এই ক্ষুদ্র উদ্যোগটি একটি বিকল্প উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে উঠে। বর্তমানে এটি ২২টি ভোক্তা সমবায় এবং 8টি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির একটি বিশাল ফেডারেশনে পরিণত হয়েছে যার বর্তমান সদস্য সংখ্যা চার লক্ষাধিক এবং বার্ষিক টার্ণওভার প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেহেতু কো-অপারেটিভ সদস্যগণ নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং স্বাস্থ্য সচেতন তাই এটি জৈব খাদ্য নিয়ে কাজ করে এবং জেনেটিকালি মডিফায়েড (জিএম) খাদ্য এড়িয়ে চলে। খাদ্যপণ্যসহ বাকী সকল পণ্যই সমবায়ের সাথে যুক্ত কৃষক বা উৎপাদকগণ সরবরাহ করে থাকে। যখন ক্লাব তাদের নিজস্ব পরিবেশগত বা সামাজিক স্ট্যান্ডার্ড পূরণের জন্য পর্যাপ্ত মানের পণ্য খুঁজে না পায় কেবল তখনি তা নিজেরা উৎপাদন করার কথা বিবেচনা করে। শুধু দুধ এবং এক প্রকার বায়োডিগ্রেডেবল সাবান সমবায় নিজেরাই উৎপাদন করে। শুধু তাই নয়, এটি এখন সমবায় সদস্যদের সামাজিক কল্যাণ, পরিবেশ উন্নয়ন এবং নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
কর্মপদ্ধতি
সিকাতসু ক্লাব পরিবারগুলো বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত যারা সম্মিলিতভাবে সরাসরি কৃষকের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে থাকে। ক্লাবের সাথে যুক্ত কৃষকগণ সমবায়ের সদস্যদের চাহিদামত খাবার উৎপাদন করে দেয়। যেহেতু ক্লাব সদস্যগণ “যুক্তিসঙ্গত দামে নিরাপদ খাদ্য” চায় সেহেতু তারা নিজেরাই উৎপাদকদের সহযোগিতায় খাদ্য এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সকল তথ্য যেমন- উৎপাদন উপকরণ, উৎপাদন প্রক্রিয়া, প্যাকেজিং উপকরণ, পরিবেশগত দিক, ইত্যাদির একটি স্যান্ডার্ড নির্ধারণ করে উৎপাদকদেরকে সরবরাহ করে এবং পণ্যের অগ্রিম অর্ডার দেয়। অর্ডার পাওয়ার পর উৎপাদক সমবায়ের চাহিদামত মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করে যথাসময়ে সরবরাহ করে থাকে। এরূপ অগ্রিম-অর্ডার সম্বলিত ক্রয় ব্যবস্থা সমবায় ব্যবস্থাপকদরকে আগাম পরিকল্পনা করতে এবং পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, বাজারকে মানবিক করার জন্য উৎপাদক এবং ভোক্তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। বিশেষ করে খাদ্য যাতে নিরাপদ, ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত হয় এবং কেবল মুনাফা করার হাতিয়ারে পরিণত না হয় তা উৎপাদক এবং ভোক্তা উভয়ে মিলেই নিশ্চিত করে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভোক্তা নিজে অথবা তাদের প্রতিনিধি সরেজমিনে কৃষকের মাঠে গিয়ে নিয়মিতভাবে উৎপাদন পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
স্থানীয় এবং GMO-মুক্ত খাদ্য ও স্থায়িত্বশীল কৃষির প্রসার
ক্লাব তার সদস্যদের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং কৃষির স্থায়িত্বশীলতাকে নিশ্চিত করে জিএমও-মুক্ত ফসল উৎপাদনে উদ্যোগী হয় যেখানে স্থানীয় কৃষি প্রতিবেশ, কৃষ্টি এবং খাদ্য সংস্কৃতি সংরক্ষণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই ক্লাব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য উদারীকরণ চুক্তির আলোকে স্বাক্ষরিত ”ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট”-এর প্রভাবে বিলুপ্তির হুমকির মধ্যে নিপতিত হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক ও স্থায়িত্বশীল কৃষির চর্চাকে লালন করে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীদের জন্য বৈচিত্র্যময় কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা এই ক্লাবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানের ভঙ্গুর, চরম অস্থায়িত্বশীল, অস্থিতিশীল, অস্থির, এবং ধ্বংসাত্মক নয়াউদারনৈতিক ব্যবস্থার বিপরীতে একটি বিকল্প জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এই ক্লাব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
যখন জাপানের বাজার আমদানিকৃত জিএম খাদ্যে সয়লাব তখন সিকাতসু ক্লাব ১৯৯৭ সালে নিজেদেরকে জিএম মুক্ত ঘোষণা করে। উৎপাদকদের সহযোগিতায়, সিকাতসু ক্লাব প্রতিটি খাদ্য আইটেম সরেজমিনে পরিদর্শন করে এমন একটি নিজস্ব মান নিয়ন্ত্রণ ও লেবেলিং ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে যেখানে জিএম খাদ্যসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানযুক্ত খাদ্য কঠোরভাবে বর্জন করা হয়।
পরিবেশ সংরক্ষণ
পণ্য মোড়কায়ন এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে ফেরতযোগ্য বোতল এবং পাত্র ব্যবহার করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাসে সিকাতসু ক্লাব ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। কোমল পানীয়, সয়াসস এবং জ্যামের মতো ষাটটি খাদ্য সামগ্রী ফেরতযোগ্য বোতলে সদস্যদের কাছে বিতরণ করা হয়। ২০১৭ সালের এক হিসেব থেকে দেখা যায়, সেবছর ক্লাবের খাদ্য সরবরাহ চেইনে প্রায় ৪,৩০০ টন কন্টেইনার এবং বোতল পুনব্যবহার করা হয়েছিল যা প্রায় ২,৪০০ টন কার্বন-ডাই-অক্রাইড নির্গমন হ্রাস করতে ভূমিকা রাখে।
হিরোসিমা ও নাগাসাকির জঘন্য ও ভয়াবহ পারমানবিক বোমার প্রলয়ংকরী অভিজ্ঞতার আলোকে সিকাতসু ক্লাব একটি পারমাণবিক মুক্ত সমাজের লক্ষ্যে কাজ করে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে বায়ু শক্তি এবং সৌরশক্তি ব্যবহার করে। ক্লাবের নিজস্ব ফ্যাক্টরি, গোদাম, প্রক্রিয়াকরণকেন্দ্র, সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বিপণন কেন্দ্র সর্বত্রই নিজেদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এজন্য “সিকাতসু ক্লাব এনার্জি কোম্পানি লি.” নামে একটি কোম্পানি গড়ে তুলেছে যা বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন এবং বিপণনের কাজে নিয়োজিত।
সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচী
প্রতিটি অঞ্চলের সিকাতসু ক্লাবগুলি সদস্যদের সার্বিক কল্যাণ সাধনে তাদের নিজস্ব নার্সিং হোম, শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার, বয়স্কদের সেবাকেন্দ্র ইত্যাদি সেবামূলক ও অলাভজনক নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। সিকাতসু ক্লাব গ্রুপের কল্যাণমূলক কর্মসূচির মোট মূল্য বর্তমানে প্রায় কুড়ি বিলিয়ন ইয়েনে পৌঁছেছে যা জাপানের একটি কর্পোরেট গ্রুপের জন্য সবচেয়ে বড়। ১৯৮০-এর দশক থেকে ক্লাবটি ৬০০ জনেরও বেশি কর্মী নিয়ে রেস্তোরাঁ, বেকারি, ব্যবহৃত পণ্যের দোকান, সাবান কারখানা এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া শুরু করেছে। ২০১৮ সাল অবধি এই ধরনের সমষ্টিগত উদ্যোগে প্রায় ১৭,০০০ সদস্য কর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিল।
সিকাতসু ক্লাব কনজ্যুমারস কো-অপারেটিভ আজকের শিল্পায়িত বিশ্বের নয়াউদারনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উৎপাদন ও ভোগের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড এবং বৈষম্যপূর্ণ কর্পোরেট খাদ্য ব্যবস্থার নানাবিধ সংকটের সমাধান দিতে সক্ষম একটি সফল ও টেকসই মডেল। খাদ্যসহ অত্যাবশ্যক নিত্যপণ্যের উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবস্থাকে একটি কঠোর সামাজিক এবং পরিবেশগত নীতিকাঠামোর মধ্যে এনে জনকল্যাণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এটি একটি অনন্য মডেল যা বিকল্প অনুসন্ধানি মানুষের কাছে নিরাশার আধারে আশার প্রদীপ হিসেবে প্রতিভাত হয়। এটি সমাজতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদী উভয় প্রকার শিল্পায়নের একটি মৌলিক বিকল্পের সন্ধান দেয়। উৎপাদন ও ভোগের সবচেয়ে সফল ও টেকসই মডেল তৈরি করার জন্য ১৯৮৯ সালে সিকাতসু ক্লাব কো-অপারেটিভ ”রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড ১৯৮৯” অর্জন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান ভয়াবহ অভিঘাত, বিধ্বস্ত মাটি-পরিবেশ-জীববৈচিত্র-খাদ্য সংস্কৃতি এবং আমাদের খাদ্য ব্যবস্থার চলমান সংকট মোকাবিলা করে একটি পরিবেশসম্মত, মানবিক ও স্থায়িত্বশীল খাদ্য উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইচ্ছুক মানুষদের জন্য এটি একটি দৃষ্টি-উন্মোচক মডেল হতে পারে।
শহীদুল ইসলাম
কৃষিবিদ ও কৃষি উন্নয়ন গবেষক